Close

নাট্যকেন্দ্র’র নতুন প্রযোজনা – ‘স্যাফো চিত্রাঙ্গদা’

“Oh Dear Lady,
Don’t crush my heart with pains and sorrows…”
কিংবা,
“কী কোমল সেই বালিকা,
ওই বালককে ভালোবেসে এরই মাঝে আমাকে হত্যা করেছে।”
আজ থেকে প্রায় দু’হাজার ছ’শো বছর আগে গ্রীসের লেসবসে বসে এই ধরণের কবিতা লিখছেন একজন নারী। নাম তাঁর – স্যাফো। দেব-নির্ভর প্রেমের কচকচি ছেড়ে মানবিক প্রেমের কথা প্রথম উঠে আসছে তাঁর কবিতায়। প্রেমের অঞ্জলি নিয়ে তিনি কখনো দাঁড়িয়েছেন তাঁর আশেপাশের মেয়েদের কাছে, তাঁদেরও উৎসাহ দিয়েছেন কাব্য রচনায়, আবার কখনও বিশেষ একজন প্রণয়িনী, কেইসকে উজাড় করে দিয়েছেন তাঁর হৃদয়ের প্রেম। এ সবই তাঁর কাব্যে প্রকাশিত। বিবাহিতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর কাম, প্রেম সবই বারবার অর্পণ করতে চেয়েছেন নারীকেই। যে গ্রীস পেডেরাস্টি নিয়ে উদার, ইলিয়াড জুড়ে পুরুষ সমপ্রেমের দীর্ঘায়িত বর্ণনা দেয়, সেই গ্রীসই গ্রহণ করতে পারেনি স্যাফোকে, স্যাফোর কাব্যকে, স্যাফোর প্রেমকে, স্যাফোর যৌনতাকে। গ্রীক কমেডি নাটকের ভাঁড়েরা তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-উপহাস করে অভিনয় মঞ্চস্থ করেছে সর্বজনসমক্ষে। দীর্ঘদিনের উপেক্ষিতা স্যাফো পরিচিতি পান, মর্যাদা পান একেবারেই সাম্প্রতিককালে, যখন তাঁর অধিকাংশ কাব্যই বিনষ্ট। আসলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ অতি কষ্টে কিছু ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সম-মর্যাদার স্থান দিলেও যৌনক্ষেত্রেও একজন নারী পুরুষের ভূমিকা নিয়ে, পুরুষকে পূর্ণ মাত্রায় অগ্রাহ্য করে, অন্য এক নারীকে দৈহিক সুখ দেবে- এটা কিছুতেই মানতে পারে না। দু’হাজার ছ’শো বছর আগেও পারেনি, আজও না। ল্যাকাডিয়ান পাহাড়ের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে স্যাফো আত্মহত্যা করেছিলেন। বাংলায় স্যাফোর কবিতা অনুবাদ করেছেন দু’জন। শিশির কুমার দাশ এবং উৎপল কুমার বসু। কিছুদিন ধরে স্যাফোকে নিয়ে কাজ করার সুবাদে দেখলাম, বাংলা থিয়েটারের অনেকেই চেনেন না, নামও শোনেননি স্যাফোর। অবাক হয়েছি! অথচ, স্যাফোর লেখা পড়লে চমকে উঠতে হয়।
“I tell you
someone will remember us
in the future.
Now, I shall sing these songs
Beautifully
for my companions.”
লেখায় অন্য ছন্দ, অন্য রোমান্টিসিজম নিয়ে আসা এই কবিকে নিয়েই আমার পরের নাটক। শুরু হয়ে গেছে রিহার্সাল।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মণিপুরে ছিলেন এক রাজকন্যা, যিনি বায়োলজিক্যালি নারী হলেও অন্তরে ছিলেন পুরুষ। রাজনৈতিক স্বার্থে, অর্জুনের সঙ্গে তাঁর বাবা বিয়ে দিলেও, তিনি সেই বিয়ে নিয়ে সুখী ছিলেন না, যে কারণে আর কখনো অর্জুনের মুখোমুখি হননি, এমনকি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও নিজের ছেলে বভ্রুবাহনকে পাঠানি। নাম তাঁর চিত্রাঙ্গদা।
কোন এক অজানা অলৌকিক সময়যানের সাহায্যে, রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তম নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র চরিত্র- ‘মদন’, মুখোমুখি করে দেয় স্যাফো ও চিত্রাঙ্গদাকে। শুধু মুখোমুখি নয়, তাঁদের মধ্যে প্রেমও হয়। কিন্তু, রাষ্ট্র এই প্রেমকে অস্বীকার করে। সর্বতোভাবে চেষ্টা করে স্যাফো ও চিত্রাঙ্গদাকে বিচ্ছিন্ন করার। আদৌ তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয় কি? এই আখ্যান নিয়েই তৈরি হচ্ছে দমদম শব্দমুগ্ধ নাট্যকেন্দ্র’র নতুন প্রযোজনা – ‘স্যাফো চিত্রাঙ্গদা’।

নাটক : ‘স্যাফো চিত্রাঙ্গদা’
প্রযোজনা : দমদম শব্দমুগ্ধ নাট্যকেন্দ্র
নাট্য ও নির্দেশনা : রাকেশ ঘোষ

নেপথ্যে :
আলোক পরিকল্পনা : বাবলু সরকার
সঙ্গীত : জগমোহন সিং জনি, অভিজিৎ আচার্য্য
শব্দ প্রক্ষেপণ : বন্দন মিশ্র
পোষাক : উর্মি হাজরা
কোরিওগ্রাফি : অনিন্দ্য রায়, রুদ্র মিশ্র
নামাঙ্কণ : রঞ্জন বোস

মঞ্চে :
চিত্রাঙ্গদা : লোপামুদ্রা গুহ নিয়োগী
স্যাফো : কৃষ্ণা রায়
চিত্রবাহন : অভিষেক মুখার্জি
বসন্ত : সন্দীপ ঘোষ
ক্যারাক্সাস : শৌভিক ঘোষ
নওনেট : অনিন্দ্য রায়
হার্মিস : আল্ আমিন আলি
আলকেওস : প্রণয় বিশ্বাস
এবং
মদন : রঞ্জন বোস

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top