Close

“ডিয়ার মামা” পুস্তক প্রকাশ

আনন্দ সংবাদ লাইভ: কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন অনলাইন মাধ্যমে “ডিয়ার মামা” পুস্তকের প্রকাশনার কথা ঘোষণা করে। বইটির প্রতিটি পাতায় রয়েছে বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বদের লেখা তাদের মায়ের উদ্দেশ্যে চিঠি। এইসমস্ত ব্যাক্তিদের তালিকায় রয়েছেন, বিলিয়নেয়ার, আধ্যাত্মিক গুরু, ব্রিটিশ হাউস অফ লর্ডস এর সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, রাজপরিবারের সদস্য, অভিনেতা-অভিনেত্রী, উদ্যোগপতি, সাংবাদিক, ফোটোগ্রাফার এমনকি চিকিৎসক।

প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারের স্ত্রী তথা ব্রিটিশ ব্যারিস্টার তথা লেখিকা ও নারী অধিকার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী শেরি ব্লেয়ার শ্রী সিমেন্ট আয়োজিত অনলাইন ইভেন্ট ‘কিতাব’ এ আনুষ্ঠানিকভাবে বইটি প্রকাশ করেন। দেশ ও দেশের বাইরের শতাধিক দর্শক অংশ নেন এই ভার্চুয়াল পুস্তকপ্রকাশনে। লেখিকা মোহিনী কেন্ট ‘লিলি এগেনস্ট হিউম্যান ট্রাফিকিং’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন। এই সেবাধর্মী সংস্থা মানুষপাচার বিশেষত শিশুপাচার বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত।

লেডি মোহিনী কেন্টের বইটির প্রচ্ছদ জুড়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দলাই লামা, শেরি ব্লেয়ার, স্যার ক্লিফ রিচার্ড, জি পি হিন্দুজা, শ্রী এম, কিরণ মজুমদার শ, আরশাদ ওয়ারসি, ডঃ করণ সিং, স্যার মার্ক টালি, শর্মিলা ঠাকুর, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা, সন্দীপ ভুতোড়িয়া, লর্ড পারেখ, কে পি সিং সহ বিশিষ্টজনের তাদের মায়ের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি।

“গভীর ভালোবাসা, আবেগ, আন্তরিকতা, উৎসাহে ভরপুর চিঠির আকর এই ‘ডিয়ার মামা’ বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের কাছে এক বিশেষ সম্মান। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বইটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা থাকলেও বিশ্বমহামারীর কারণে তা পিছিয়ে যায়। স্বর্গীয় মায়ের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে খুবই মর্মস্পর্শী এক অভিজ্ঞতা” জানান প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি শ্রী সন্দীপ ভূতোড়িয়া।

প্রতিটি শিশুর জীবনে তার মা হল প্রথম গুরু, পথপ্রদর্শক। মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিঙ্কন, গৌতম বুদ্ধর মাতৃভক্তি সর্বজনবিদিত। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীর হীরক জয়ন্তী উদযাপনের সময় প্রিন্স চার্লস সমবেত জনতার সামনে সর্বসমক্ষে রানীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। অপরদিকে এই বইয়ে নিহিত রয়েছে কিছু বিষাদময় অভিজ্ঞতা, যে সমস্ত কন্যাদের ক্রীতদাসী হিসাবে বিক্রী করে দিয়েছিল তাদের মা। রয়েছে সেইসব হৃদয়বিদারী, আতঙ্কের বিশ্বাসঘাতকতার করুণ কাহিনী।

লেডি মোহিনী তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লিলি এগেনস্ট হিউম্যান ট্রাফিকিং’ এর পাথেয় অর্জনের উদ্দেশ্যে এই বইটি রচনা করেছেন। ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজন অনলাইন মাধ্যমে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

শেরী ব্লেয়ারঃ

মানবাধিকার আইনজীবি তথা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন তথা লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স এর গভর্নর ও ওমনিয়া স্ট্র্যাটেজি এলএলপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শেরি ব্লেয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মহিলাসুরক্ষা প্রনিধান ও মহিলা উদ্যোক্তাদের উন্নতিকল্পে তিনি গঠন করেছেন শেরি ব্লেয়ার ফাউন্ডেশন। লন্ডনের অধিবাসী শেরি প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারের স্ত্রী।

লেডি মোহিনী কেন্ট নুনঃ

লেডি মোহিনী একাধারে লেখিকা, চিত্র-পরিচালিকা, স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ও সাংবাদিক। লিলি এগেনস্ট হিউম্যান ট্র্যাফিকিং এর প্রতিষ্ঠাতা তথা চেয়ারপার্সন। ‘ব্ল্যাক তাজ’ উপন্যাস ও ‘নাগার্জুনঃ দ্বিতীয় বুদ্ধ’ বইয়ের লেখিকা লেডি মোহিনী। চিত্রনাট্য লেখা ছাড়াও চিত্র পরিচালনা ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। কাজ করেছেন বেন কিনস্লে’র মত স্বনামধন্য অভিনেতার সাথেও। ‘রুমিঃ আনভেল দ্য সান’ নামে একটি থিয়েটারও মঞ্চস্থ করেন। ইউ.কে তে আধ্যাত্মিক শিক্ষামূলক ভ্রমণ পরিচালনা করেন তিনি।

ডিয়ার মামা থেকে কিছু উদ্ধৃতিঃ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীঃ

মা হল অনুপ্রেরণার চিরসজীব বসন্ত ও সকল বাধা-বিঘ্ন দূর করার শক্তি জোগায় আমাদের মা।

দলাই লামাঃ

মা আমাকে সহমর্মীতা ও সহানুভূতির প্রথম পাঠ দেন। যে সমস্ত শিশুরা শৈশবে মায়ের অপরিসীম ভালোবাসা ও স্নেহ পায় তা বড় হওয়ার পর চরিত্রগঠন ও শান্ত প্রকৃতি গঠনে সহায়ক হয়।

শেরি ব্লেয়ারঃ

১৯৭৬ সালে যখন প্রথম কোর্টে যাই, আমার সাফল্যের সফরে অভিভাবক হিসাবে সামিল ছিলে একমাত্র তুমি।

স্যার ক্লিফ রিচার্ডঃ

“মৃত্যু কখনই সমীচিন নয়। তুমি আমাদের জীবন দিয়েছ- ডোনা, জ্যাকুই, জোয়ান এবং আমাকে। কিন্তু তোমায় ছিনিয়ে নিল মৃত্যু। তবু সব হরণ করতে পারেনি, কেড়ে নিতে পারেনি তোমার স্মৃতি”।

জি পি হিন্দুজাঃ

“কথিত আছে ভগবান নিজে সর্বত্র উপস্থিত থাকতে পারেনা বলেই সৃষ্টি করেছে তার প্রতিরূপ মা”।

শর্মিলা ঠাকুরঃ

“আমি হয়ত তোমাকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়ে সেভাবে কিছু বলিনি কখনো। তোমার প্রতিভা ও রান্নার গুণ বরাবর আমাকে মুগ্ধ করেছে।

যোগী শ্রী এমঃ

মায়ের স্নেহের সন্তান হয়েও হিমালয়ের উদ্দেশ্যে ছুটে যাই সাধনার টানে, কোন নিষেধ না মেনে। বহুবছর পর যোগী হয়ে যখন ফিরে আসি মা আগের মতই স্নেহপরবশ হয়ে গ্রহণ করেন। মা বলেই এটা পেরেছিলেন। আমি মায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরাঃ

সমুদ্রের মত সব নদীর দুঃখ-যন্ত্রণা গ্রহণ করে, তাকে পরিশোধন করে আমাদের উপর ভালোবাসার বৃষ্টি বর্ষণ করতে। সবাই বলে তুমি আর নেই। কিন্তু আমার আত্মজার মধ্যে আমি তোমার প্রত্যাবর্তন অনুভব করি। আমার সহধর্মিনীর মধ্যে তোমার ভালোবাসা ও যত্নের সুবাস পাই। ‘লিলি’ প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে এক শ্রদ্ধার্পণ।

আরশাদ ওয়ারসিঃ

প্রথম জিনিস যেটা আমার এবং সমস্ত সন্তান সন্ততিদের সবার আগে করা উচিত তা হল মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া, তার অকৃত্রিম, নিঃশর্ত ভালোবাসার যথাযথ প্রতিদান না দিতে পারার জন্য।

সোনালী বোসঃ

আমার প্রতিটি ছবি- ‘আমু’, ‘মার্গারিটা উইথ আ স্ট্র’, ‘দ্য স্কাই ইস পিঙ্ক’ মা ও মেয়ের সম্পর্ক আর মৃত্যুর গল্প বলে। কারণ আমার ২১ বছর বয়সে তোমার অকস্মাৎ চলে যাওয়ার আগে তুমিই ছিলে আমার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।

মিলখা সিং:

আমাদের বাড়ি ছিল মুলতানে। হঠাৎ একদিন শুনি ভারত ভাগ হবে। একদল মুসলিম অস্ত্রশস্ত্র-বন্দুক নিয়ে আমাদের ঘেরাও করে। বাবা চেঁচিয়ে বলে, “ভাগ মিলখা”, পিছনে ঘুরে তাকাস না”। তোমার কথা আমি পালন করেছিলাম। সব শান্ত হয়ে যাওয়ার পর যখন আমি ফিরে এলাম ততক্ষণে ওরা তোমাদের শেষ করে দিয়েছে। তোমার নিষ্প্রাণ দেহের উপর শুয়ে কান্নাই ছিল তোমার সাথে আমার শেষ স্মৃতি।

খালিদ মহম্মদঃ

বিমান দুর্ঘটনায় তুমি তোমার একমাত্র সন্তান জুবেইদাকে হারিয়েছিলে। আমরা শুধু তার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া শরীরের কিছু অংশ খুঁজে পেয়েছিলাম। তবু সেই তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলে, আমায় রক্ষা করেছিলে। ফয়াজি মা, তোমার ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি তোমায় বলতে চাই যে আমি ভালো আছি।

ডঃ করণ সিং:

অপরিসীম সহানুভূতি ও যত্নের আধার ছিলে তুমি। তোমার কাছে কিছু অবিস্মরণীয় শিক্ষা পেয়েছি আমি। উৎসবের দিনে তুমি যে ডোগরা-পাহাড়ী লোকগান গাইতে, তা আমি তোমার থেকে শিখেছি। আমাদের সংস্কৃতিতে মায়ের আলাদা সম্মানের আসন রয়েছে। হিন্দুপুরাণ মতে মা আমাদের দেবী। বহুরূপে তিনি বিরাজ করেন।

রঘু রাইঃ

দেশভাগের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর। তথন বোঝার মত সামর্থ্য ছিল না ঐ প্রতিকূল পরিবেশে দশটি সন্তানকে একা হাতে, কারোর সাহায্য ছাড়া মানুষ করা কতটা কঠিন। মা অসীম দক্ষতায় তার নিপুণ হাতের বুননে এতজনের পরিবারকে শত দুঃখের মধ্যেও এক সুখের জাদুসুতোয় বেঁধে রেখেছিল।

বিজয় খট্টরঃ

যদিও তুমি জন্ম থেকে বাক ও শ্রবণশক্তিরহিত ছিলে তবু তোমার মত স্পষ্ট করে ভাবপ্রকাশ করতে আমি খুব কম মানুষকে দেখেছি। আমি খুব আশ্চর্য হতাম একইসঙ্গে শব্দহীন নিস্তব্ধতাকে ভয়ও পেতাম। কাশ্মীরে রাজনৈতিক অসন্তোষ শুরু হওয়ার পরে আমরা কাশ্মীর ছেড়ে আসতে বাধ্য হই। তুমিই এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের সম্পূর্ণ পরিবারকে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যেও স্বাভাবিক রাখতে পেরেছিলে।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top