Close

স্মরণে বিদ্যাসাগর

✍️রামিজ আলি আহমেদ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

আজ ২৯ জুলাই, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯১ সালের এই দিনে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সে কোলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জন্ম ১৮২০ সালের ২৬সেপ্টেম্বর(১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন)বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। ঊনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ছিলেন বিদ্যাসাগর। তার প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান

তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মা ভগবতী দেবী অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা ছিলেন। তাঁর ঠাকুর্দা রামজয় তর্কভূষণ যথেষ্ট খ্যাতিসম্পন্ন ছিলেন। কিন্তু দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতেন। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য বীরসিংহগ্রাম ত্যাগ করে অর্থ উপার্জনের জন্য কলকাতায় চলে আসেন। পিতার সঙ্গে কলকাতা আসার পথে ঈশ্বরচন্দ্র ইংরেজি লেখা মাইলস্টোন দেখতে দেখতে আসছিলেন। কলকাতায় এসে পিতাকে বললেন — আমি ইংরেজি সংখ্যা শিখে ফেলেছি। পিতা বললেন,”তুমি তো ইংরেজি পড়োনি।” পুত্র বলল,” আমি রাস্তার পাশে লেখা দেখে শিখে ফেলেছি।” তাঁর মেধাশক্তির পরিচয় এমনই অদ্ভুত ছিল।

পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

ঈশ্বরচন্দ্রের বাল্য ও কৈশোরকাল অতীব দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে কাটলেও অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশুনায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন। সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষায় বিশেষ সাফল্যের জন্য মাসিক পাঁচ টাকার বৃত্তি লাভ করেন। ব্যাকরণ পড়াশুনার পাশপাশি ইংরেজির অধ্যায়নও করেন। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সাহিত্য শ্রেণীতে বিশিষ্ট শিক্ষক জয়গোপাল তর্কালংকারের কাছে শিক্ষালাভ করেন। সংস্কৃত কলেজে তিনি বারো বছর পড়াশুনা করেন এবং বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন আর কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত হন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কৃতী অধ্যাপক প্রেমাদ তর্কবাগীশের অলংকার শ্রেণীতে অধ্যায়ন কালেই বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। তারপর বেদান্ত শ্রেণী এবং স্মৃতি শ্রেণীতে পাঠাভ্যাস সময়ে প্রখ্যাত পণ্ডিত হরনাথ তর্কভূষণ এবং শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতির সহায়তায় অভাবনীয় কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি প্রাপ্ত হন। সেইসঙ্গে পুরস্কার স্বরূপ ৮০টাকা অর্জন করেন। তারপর ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু ল কমিটি’র পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।

মা ভগবতী দেবী

তিনি কাব্য, অলংকার, বেদান্ত, স্মৃতি, জ্যোতিষ এবং ন্যায়শাস্ত্রে অর্জন করেন অগাধ পাণ্ডিত্য।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ক্ষীরপাইয়ের শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের কন্যা দিনময়ী দেবীকে বিবাহ করেন। শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্য ও খ্যাতিমান-শ্রদ্ধাবান প্রিয়ভাজন ছিলেন ওই অঞ্চলের জনসাধারণের কাছে।

স্ত্রী দিনময়ী দেবী


১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। জি. টি. মার্শাল সাহেব সেক্রেটারি ছিলেন ওই কলেজের। অল্পবয়সি বিদ্যাসাগর পাঁচ বছর ওই কলেজে দক্ষতার পরিচয় প্রদান করেন এবং ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর মাসিক ৫০ টাকা পারিশ্রমিকে সহকারী সম্পাদকের পদে অভিষিক্ত হন। জি. টিমার্শাল সাহেব বিদ্যাসাগরের ভূয়সী প্রশংসা করলেও বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ওই পদ হতে পদত্যাগ করেন।
মার্শাল সাহেব বিদ্যাসাগরের পদত্যাগের সংবাদে বিদ্যাসাগরকে তার কলেজের করণিকের পদে নিযুক্ত করেন। বিদ্যাসাগর ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক পদে আসীন হন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে ২২শে জানুয়ারি ১৫০ টাকা মাসিক বেতনে ওই পদে নিযুক্ত হন। কলেজের কর্তৃপক্ষ তার অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা ও তৎপরতায় বিমুগ্ধ হয়ে তার বেতন ৩০০ করে দেন। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ তুলে দেওয়া হয়। সেখানে স্থাপিত হয় বোর্ড অব এগজামিনার্স। বিদ্যাসাগরকে বোর্ডের সক্রিয় সদস্যরূপে নিযুক্ত করে বিদ্যালয় সমূহের সহকারী পরিদর্শকের পদে নিযুক্ত করা হয়। উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় স্থাপন এবং ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল’ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলো। বিদ্যাসাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সমিতির সদস্য মনোনীত হলেন। তিনি পরে প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদকের পদ লাভ করেন। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে নূতন নামকরণ করা হয় হিন্দু মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন। পরবর্তী সময়ে এখানেই গড়ে ওঠে বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়। তিনি সাঁওতালদের জন্যও বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নারীশিক্ষার তিনিই পথিকৃৎ।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় কন্যার ছবি


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যসাহিত্যের জনক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গদ্যসাহিত্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই লাভ করে ফেলেছিলেন বিদ্যাসাগর উপাধি। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষার উপর তার আধিপত্য ছিল বিস্তর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন ও বোধগম্য করে তোলেন।রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা।


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছেন অসংখ্য বই। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে ‘বর্ণপরিচয়’, ‘অন্নদামঙ্গল’, ‘কিরাতার্জ্জুনীয়ম্’, ‘শিশুপালবধ’, ‘কাদম্বরী’, ‘বাল্মীকি রামায়ণ’, ‘মেঘদূতম্’, ‘পোয়েটিক্যাল সিলেকশনস্’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘রত্নপরীক্ষা’, ‘ব্রজবিলাস’ ইত্যাদি।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে খুব অল্প কথায় বাঁধা সম্ভব নয়। ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, শাস্ত্র, বেদান্ত, ন্যায়, তর্ক, জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিন্দু আইন, সংস্কৃত, হিন্দি এবং ইংরেজি বিষয়ে তাঁর বিপুল অফুরন্ত জ্ঞান ছিল। ভাবতে অবাক লাগে, ১৮৫৭ থেকে ১৮৫৯ – এই তিন বছরে তিনি মোট চল্লিশটি বাংলা বালিকা বিদ্যালয় ও একটি ইংরেজি-বাংলা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তারপরেও আরো অনেক হয়েছে। আজকে আমরা বাংলা ভাষায় যে পড়ছি-লিখছি তা বিদ্যাসাগরের দান বলা যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারি, তাই তিনি ‘দয়ারসাগর’।

বাল্যবিধবা, বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ প্রভৃতি নারীজাতির নিপীড়ন দুরাচার-দুর্গতির মোচন করাকে জীবনের অন্যতম ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁরই অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুলাই বিধবা-বিবাহ আইন বিধিবদ্ধ হয়।তবে শুধু আইন প্রণয়নেই ক্ষান্ত থাকেননি বিদ্যাসাগর। তার উদ্যোগে একাধিক বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

১৮৬৬ সালের শেষ দিকে এক বিদেশিনি শিক্ষাব্রতী মিস মেরি কার্পেন্টার বিলেত থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। উদ্দেশ্য, ভারত তথা বাংলায় স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার। বেথুন স্কুলে পরিচয় হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে, প্রথম আলাপেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয় মেরি কার্পেন্টারের এবং যথারীতি বিদ্যাসাগর মহাশয়’কে সঙ্গে নিয়েই বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন তিনি। এমনই এক সময়ে, ১৮৬৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর, উত্তরপাড়ায় মেয়েদের একটি স্কুল দেখে ফিরছেন তাঁরা। একটি গাড়িতে আছেন বিদ্যাসাগর, অন্য গাড়িতে আছেন মেরি কার্পেন্টার ও আরো দুজন সাহেব শিক্ষক। বালি স্টেশনের কাছে যে গাড়িতে বিদ্যাসাগর ছিলেন সেটা হঠাৎ উলটে যায়। ছিটকে পরে প্রচণ্ড আঘাত লেগে অজ্ঞান হয়ে গেলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। অচেতন বিদ্যাসাগরকে কলকাতায় আনলেন মিস কার্পেন্টার। ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার জানালেন, লিভারে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে ও অ্যাবসেস দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। কিন্তু ব্যথা কিছু কমলেও সেইথেকে কোনও দিনই আর সম্পূর্ণ সুস্থ হননি।

যে বাড়িতে বিদ্যাসাগর থাকতেন

জীবনের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সময় পর্যন্ত তিনি সব দিক থেকেই যন্ত্রণায় কাটিয়েছিলেন। নিজের মা-বাবা, স্ত্রী সহ ছেলে, চার মেয়ে ও জামাইরা সহ প্রায় সকলের সাথেই তাঁর মতোবিরোধ হয়েছে। অন্যদিকে কর্মজীবনে অগাধ উপার্জন করেও অত্যধিক দানধ্যানে হাতখালি করে কখনও খরচ চালাতে নিজের ছাপাখানার অংশীদারি কম টাকায় বিক্রি করেছেন, কখনও উঁচু মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুধু বই লিখেই খরচ চালিয়েছেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামাইয়ের ছবি

বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলেরা রোগের ভয়ে একমাত্র নাতি নারায়ণচন্দ্র’কে কিছুতেই কলকাতায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে দেননি। বিদ্যাসাগর একবার চেষ্টা করেও ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে ধরে রাখতে পারেননি। একমাত্র ছেলে গ্রামের বাড়ীতে অত‍্যধিক আদরে বাঁদর তৈরি হয়েছে। বিদ‍্যাসাগর মহাশয় আরো একবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। একসময় ছেলে সম্পত্তির লোভে বাবার কথা শুনে চলত। সেসময় পরিবারের সকলের অমতে নিজের একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক বিধবা কন্যা ভবসুন্দরী দেবীর সাথে বিয়েও দেন (১৮৭০)। সেই বিয়েতে প্রচণ্ড আপত্তি ছিল তাঁর মা ভগবতী দেবী, স্ত্রী দীনময়ী দেবী সহ পরিবারের অন্যান্য সকলের, এই কারণে পরিবারের কেউই এই বিয়েতে অংশ নেয়নি। আবার পরে সেই একমাত্র ছেলের নেশাগ্রস্ত ব্যবহারে তাকে করেছেন ত্যাজ্য, এমনকি উইলে সম্পত্তির ভাগও দেননি। বাবা কাশীবাসী হলেন (১৮৬৫), মা সেখানেই কলেরায় মারা গিয়েছেন (১৮৭১)। নিজের ছেলের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধের সাথে সাথে কার্যত পত্নী-বিচ্ছেদও ঘটেছিল, স্ত্রী চলে গেছিলেন গ্রামের বাড়ি। শেষ জীবন পর্যন্ত অভিমানী স্ত্রী ছিলেন গ্রামের বাড়ীতেই, স্বামী বিদ‍্যাসাগরের সাথে আর দেখাই হয়নি। একমাত্র ছেলের প্রতি স্বামীর এই ব‍্যবহার মানতে না পারা দীনময়ী দেবী মারা যান (১৮৮৮) বিদ্যাসাগরের আগে। বিদ্যাসাগর নিজের স্ত্রী’র পারলৌকিক কাজের সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, কিন্তু নিজে বীরসিংহে শ্রাদ্ধবাসরে যাননি।

যে বিধবা বিবাহের জন্য তিনি বহু আগে সেই ১৮৫০ সাল থেকে লড়াই করেছেন, অকাতরে অর্থ খরচ করেছিলেন, সেই সময়ের হিসাবে খরচ করেছেন আশি হাজার টাকার বেশি। নিন্দা, অত্যাচার সহ্য করেছেন। সেই বিধবা বিবাহের জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে ঠকেছেনও। অনেকেই বিধবা বিবাহের মিথ্যে নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। প্রচণ্ড ক্ষোভ দুঃখে বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশের লোক এত অসার ও অপদার্থ বলিয়া পূর্বে জানিলে আমি কখনই বিধবাবিবাহ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতাম না।’’

সমাজের ওপর বীতশ্রদ্ধ বিদ্যাসাগর সভ্য সমাজ থেকে দূরে সাঁওতাল পরগণার কারমাটারে (জামতাড়া ও মধুপুরের মাঝে ছোট্ট স্টেশন) আদিবাসী প্রাণবন্ত মানুষের মাঝে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৭১ সালে তিনি এখানে এক বাগানবাড়ি কিনেছিলেন। সেখানেও তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র তেরি করে দেন। মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন তাঁকে আবার কর্মজগতে নিয়ে আসে। ১৮৭৭ সালে তিনি কলকাতার বাদুরবাগানে নতুন বাড়ি তৈরি করেন। মাঝে শরীর ভালো করার জন্য চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ে এক ভাড়া বাড়িতে থেকেছেন। শেষে ডাক্তারের পরামর্শে ১৮৯১ সালের জুন মাসে কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়িতে ফিরলেন, শরীর তখন অত্যন্ত খারাপ।১৮৯১ সালে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবেও লেখা হয়েছিল লিভারে ক্যানসার।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাগুরু, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রয়াত হন ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই, বাংলা ১২৯৮ সনের ১৩ শ্রাবণ, রাত্রি দুটো আঠারো মিনিটে তাঁর কলকাতার বাদুড়বাগান বাড়ীতে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ১০ মাস ৪ দিন। মৃত্যুর কারণ- ডাক্তারের মতে, লিভারের ক্যানসার।

তথ্যসূত্র:বিভিন্ন বিশিষ্ট লেখকদের প্রকাশিত লেখা

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top