Close

“মা হওয়া পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুভূতি”:অঙ্কিতা

“জড়োয়ার ঝুমকো“ খ্যাত টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী কী জানালেন নিজের মাতৃসত্বা নিয়ে ! লকডাউনের দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে একপশলা বৃষ্টি ও তাজা ফুলের সুগন্ধি নিয়ে ফোনের অপরপ্রান্তে ধরা দিলেন অঙ্কিতা মজুমদার পাল। সঙ্গে আনন্দ সংবাদ লাইভ -এর প্রতিনিধি আলাপন রায়

প্রশ্নঃ জীবনে প্রথমবার মা হতে চলেছো, ঠিক এইমুহূতে কেমন অনুভব করছো ?

অঙ্কিতাঃ মা হওয়া পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুভূতি । আর আমার বন্ধুদের মতে খুব শীঘ্রই আমি মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি , তো তাদের কাছে আমি একজন ইয়ং মাদার । এত অল্প বয়সে মা হওয়ার কারনে এখন সবকিছু বুঝতে একটু সময় লাগছে । এইসময় তো প্রত্যেক মেয়েরই বাপের বাড়িতে নিজের মায়ের কাছে থাকায় কাম্য, কিন্তু লকডাউনের জন্য যেটা সম্ভব হচ্ছেনা । ফোনে রোজ কথা হলেও সামনাসামনি যতটা সাবলীলভাবে কথা বলা যায় সেটা ফোনে হয়ে ওঠে না । এ এক অদ্ভৃত অনুভূতি । সবমিলিয়ে দারুন উপভোগ করছি নিজের মাতৃসত্বাকে । আর সমস্ত মায়েদের মত অনুভূতিটা খুবই স্পেশাল আমার কাছেও ।

প্রশ্নঃ সুখবরটা জানানোর পর পরিবার থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেলে ?

অঙ্কিতাঃ এই প্রশ্নের জবাব দিতে হলে একটু অতীতে ফিরে যেতে হয় । যখন স্বপ্ন দেখতাম আমারও একদিন বিয়ে হবে, আমিও একদিন মা হব তখন সিরিয়াল কিম্বা সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয় ঠিক সেইভাবেই সুখবরটা জানাবো ঠিক করি। কিন্তু এখন বুঝতে শিখেছি বাস্তবে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না । প্রথমবার যখন আমার গর্ভে নতুন প্রানের অস্তিত্ব জানতে পারি সেটা নিজের স্বামী সৌমিত্রকেও গুছিয়ে বলতে পারিনি । শুধু ওর দিকে তাকিয়ে একগাল মুচকি হাসিতেই ব্যাপারটা ও বুঝে গিয়েছিল । আজও মনে আছে সুখবরটা জানতে পেরে কিভাবে মুহূর্তের মধ্যে বদলে গিয়েছিল ওর মুখের এক্সপ্রেশনটা । এখন মনে হয় মুহূর্তটা যদি ক্যামেরা বন্দি করে রাখতাম তবে দারুন হত । এছাড়া মাকে যখন ফোনে খবরটা দিতে চাই সেটা বুঝতে মায়ের প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় লেগে গিয়েছিল । আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান আর তার উপর সেইসময়ে মা-বাবার শরীরটা একটু খারাপ ছিল তাই খবরটা জানতে পেরে দুজনেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল । অন্যদিকে সৌমিত্রও পরিবারের একমাত্র সন্তান আর আমরা দুজনে মিলে এক নতুন প্রাণকে আনতে চলেছি সেটা দুই পরিবারের কাছে খুবই আনন্দের খবর ।

প্রশ্নঃ বাড়িতে সময় কাটছে কীভাবে ?

অঙ্কিতাঃ অনেকের মুখে শুনছি তাদের সময় কাটছে না । কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা আমার সময় কিভাবে চোখের নিমেষে কেটে যাচ্ছে । কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে আজ কত তারিখ কিম্বা সপ্তাহের কোন দিন,সেটা মনে করতেই অনেক সময় কেটে যাচ্ছে । বলতে গেলে এখন রান্নার যাবতীয় কাজ আমার শাশুড়ি মা সামলাচ্ছেন । মাঝেমধ্যে আমার কিছু স্পেশাল রান্না করার ইচ্ছা হলে আমি তা করছি । এছাড়া প্রচুর সিনেমা ,ওয়েব সিরিজ দেখছি । আগে রোজ নিউজ পড়ার সময় পেতাম না কিন্তু এখন রোজ সমস্ত নিউজ পড়ছি । সৌমিত্র অনেক কিছুর খবর রাখে, কিছু জানার থাকলে ওর থেকে জেনে নিচ্ছি । ও আমাকে কয়েকটা বই দিয়েছে সেইগুলো পড়ছি । এছাড়া অনেক অজানা তথ্য গুগল সার্চ করে জেনে নিচ্ছি । প্রেগন্যান্সি রিলেটেড অনেক ভিডিও দেখছি, যততা সম্ভব শরীরচর্চা করছি এবং প্রয়োজন অনুসারে বিশ্রামও নিচ্ছি । মোটামোটি এইভাবেই দিন কাটছে ।

প্রশ্নঃ এইসময়ে পরিবার থেকে বাড়তি কেমন আদর যত্ন পাচ্ছো ?

অঙ্কিতাঃ আগে যেমনটা বলেছি, আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান । আর এদিকে সৌমিত্রও পরিবারের একমাত্র সন্তান । তাই ছোট থেকে এখনও পর্যন্ত দুই বাড়িতেই ভীষণ রকম আদরযত্ন পেয়ে এসেছি । তাই এই মুহূর্তে বাড়তি কোনো আদরযত্ন পাচ্ছি কিনা সেটা বলা একটু মুশকিল আছে । তবে হ্যাঁ, এটা বলতে পারি আমার খাওয়ার বাপারে পরিবারের সবাই ভীষণ সতর্ক হয়ে উঠেছে । খাওয়ার উপরে অনেক বিধি-নিষেধ চাপানো হয়েছে । আগে পচ্ছন্দ না হলে এড়িয়ে যাওয়ার অধিকারটুকু ছিল এখন সেই স্বাধীনতা হারিয়েছি । সুস্বাদু না হলেও আমার জন্য, আমার সন্তানের জন্য উপকারী এমন অনেক খাওয়ার খেতে হচ্ছে । এই শাসনগুলো ভীষণভাবে উপভোগ করছি । কিছুদিন আগে রাত্রিবেলা কাউকে না জানিয়ে দুটো রসগোল্লা খেয়ে ফেলায় রীতি মতো তার জন্যে সৌমিত্রর কাছে বকা খেতে হয়েছিল । এছাড়া সবসময় কেউ না কেউ আমায় নজরে রাখছে । ঘরের মধ্য একটু হাঁটা-চলা করলে বারবার এসে দেখে যাচ্ছে সঞ্জানে আছি কিনা । এই কেয়ারিং ব্যাপারগুলো খুব ভালো লাগছে ।

প্রশ্নঃ বাপের বাড়ির লোকজনদের কতটা মিস করছো ?

অঙ্কিতাঃ খুব বাজেভাবে মিস করছি মা-বাবা দুজনকেই । সেই ফেব্রুয়ারী মাস থেকেই গুয়াহাটিতে শ্বশুরবাড়িতেই আছি । এর আগে জীবনে কোনোবার এতদিন মা-বাবার থেকে দূরে থাকিনি । জীবনের এমন একটা সুন্দর সময়ে মাকে চোখের সামনে দেখতে পাবো না, সেটা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি ।

প্রশ্নঃ এইসময়ে নিজের যত্ন নিচ্ছ কিভাবে ?

অঙ্কিতাঃ অবশ্যই আমি যে পেশার সাথে যুক্ত আছি সেখানে নিজের যত্ন নিতে হয় । ক্যামেরার সামনে কাজ করতে হলে নিজের খেয়াল রাখাটা খুব জরুরী । এখন যেহেতু কোনো বিউটি পার্লার কিম্বা স্যালুনে যাওয়ার সুযোগ নেই তাই বাড়ীতেই নানা ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে হচ্ছে । লকডাউনে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি, নামি-দামি ক্রিম মেখে যা না ফল পাওয়া যায় তার থেকে ঘরোয়া টোটকা অনেক বেশি কার্যকরী । লকডাউনের প্রথমদিকে এখানে অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল । প্রায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল । দুয়েকটা খুললেও সেখানে যা ভিড় হত তার ধারে কাছে যাওয়ার সাহস কারো হত না । এখন যদিও অবস্থা একটু নিয়ন্ত্রনে আসার কারনে প্রয়োজন অনুসারে সব খাদ‍্য-সামগ্রি পাচ্ছি । আপাতত সেইগুলো খেয়ে, প্রচুর পরিমানে জল খেয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি ।

প্রশ্নঃ এই পরিস্থিতিতে আসন্ন সন্তানের জন্য কী একটু হলেও আশঙ্কা হচ্ছে ?

অঙ্কিতাঃ আশঙ্কা তো একটু থেকেই যায় । চারিদিকের অবস্থা দেখে অবশ্যই নিজের সন্তানের জন্য একটু চিন্তা হয় । যতটা পারছি নিজেকে শারীরিক ও মানুষিক ভাবে সুস্থ রাখছি কারন সন্তানকে সুস্থ রাখতে হলে নিজে সুস্থ থাকাটা খুব দরকার । এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমার প্রসবের দিন নির্ধারিত হয়েছে । জানি না ওইসময় ভাইরাসের প্রকোপ বাড়বে কি কমবে ! সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন মা হিসাবে চিন্তা তো থেকেই যায় ।

প্রশ্নঃ সবার থেকে শুভেচ্ছাবার্তা কেমন পাচ্ছো ?

অঙ্কিতাঃ আশাতীতভাবে আমি অনেক শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি । পরিচিতদের থেকে তো অনেক পেয়েছি । এছাড়া যেটা সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে, এমন অনেক মানুষ যাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সেইভাবে চিনি না তাদের থেকেও অনেক ভালোবাসা পেয়েছি । বহু ফোন কল, ম্যাসেজ , টেক্সট পেয়েছি । যেগুলো অনেক খুশি দিয়েছে আমাকে ।

প্রশ্নঃ নতুন একটা দায়িত্ব বাড়তে চলেছে, পরবর্তীতে ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবনে ব্যালেন্স করাটা একটু মুশকিল হবে বলে কী মনে হয় ?

অঙ্কিতাঃ না, আমার ক্ষেত্রে তা মুশকিল হবে বলে মনে হচ্ছে না ।আমি বরাবরই ব্যালেন্স করে চলতে ভালোবাসি । মফস্বলের মেয়ে আমি, বহু সংগ্রাম করে আজ এখানে পৌঁছেছি । এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পরিশ্রম করে নিজের অস্তিত্ব যখন গড়ে তুলতে পেরেছি তখন পরবর্তীতে সেটা চালিয়ে যেতে পারব আশা রাখছি । এমনিতেই কাজের বাইরে আমি বেশিরভাগ সময় বাড়ীতে থাকতে পচ্ছন্দ করি । ঘুরতে যাওয়ার হলে দূরে কোথাও ভারতের মধ্যে কিম্বা ভারতের বাইরে যেতে ভাল লাগে ।তাই ব্যালেন্স করাটা খুব বেশি কষ্টকর হবে বলে মনে হয়না ।

প্রশ্নঃ আসন্ন শিশুর জন্য আগাম কোনো প্লানিং আছে কী ?

অঙ্কিতাঃ অবশ্যই অনেক প্লানিং ছিল । কিন্তু লকডাউনের কারনে সব কিছু বাতিল করতে হচ্ছে। অনেক ইচ্ছা ছিল মা আর শাশুড়ি মা এর হাত থেকে সাধ খাওয়ার, আমার বন্ধুরাও চাইলে খাওয়াতে পারতো । এছাড়া বেবি বাম্প নিয়ে ফটোশুটেরও ইচ্ছা ছিল । এইসময়টা সমস্ত মেয়ের কাছে একটা স্বপ্ন । কত পরিকল্পনা করেছিলাম, অনেক জায়গায় ঘুরতে যাবো,অনেক শপিং করবো, এছাড়া এই কয়েকদিন সবার সাথে একসঙ্গে সময় কাটাবো-কিন্তু আপাতত সব প্ল্যান বাতিল । যেটা একটু খারাপ লাগছে । তাছাড়া সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তো এখন কিছু বলা সম্ভব নয়,সেটা তো বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে । এখন একটাই ইচ্ছা সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারি,তাকে যেন সুন্দর ভাবে বড়ো করে তুলতে পারি আর সবাই যেন খুব খুশি ও ভালো থাকে ।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top