Close

ফুটবলের রাজপুত্র, জীবনেরও

✍️প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার

ফুটবল অনেকেই খেলেছেন, খেলেন এবং খেলবেন। কিন্তু দু’পায়ের জাদুতে গৃহযুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটা জাতিকে নতুন করে বাঁচার মন্ত্র শেখাতে এভাবে আর কেউ কখনও পারবেন না। এখানেই দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার স্বকীয়তা। আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাস বরাবরই রক্তাক্ত ও সংঘাতময়। সেটা ছিল কুখ্যাত ‘ডার্টি ওয়ার’-এর যুগ। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩, এই সময়কালে আর্জেন্টিনার স্বৈরাচারী সামরিক শাসকগোষ্ঠী প্রায় তিরিশ হাজার সন্দেহভাজন বামপন্থী রাজনৈতিক সমর্থককে বিনা বিচারে হত্যা করে। ১৯৮৩ সালে সেনারা ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো তখন ভেঙেচুরে একসা। নাগরিকদের মনোবল তলানিতে। মারাদোনার অধিনায়কত্বে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্তিনীয়দের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল, বিশ্বের দরবারে তারা আবার ঋজু মেরুদণ্ড সমেত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
ক্ষিপ্র দৌড়, সীমিত জমিতে অকল্পনীয় শরীরী নিয়ন্ত্রণ, লম্বা সময় ধরে বল নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা এবং অসামান্য শট বা ফাইনাল পাস। এছাড়া ডান উইং ধরে অবিশ্বাস্য গতির ড্রিবলিং, পায়ের পিছনের অংশ ব্যবহার করে শৈল্পিক রিভার্স ক্রশ পাস শট এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক ফ্রি কিক নেওয়ার দক্ষতা। মোটামুটি এই ছিল মারাদোনার পুঁজি।
জীবনে বহুবার ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছেন, ফুটবলের সঙ্গে তঞ্চকতা করেছেন, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার মামলায় ফেঁসেছেন। পরিপূর্ণ আদর্শ জীবনের অধিকারী একেবারেই ছিলেন না। কিন্তু জীবনের বহুবর্ণ ক্যানভাসের অবিসংবাদী সম্রাট তিনিই। সেইজন্যেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেই মহাবিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনালে তঞ্চকতার “হ্যান্ড অব গড” গোলের ঠিক চার মিনিট পরেই এসেছিল “গোল অব দ্য সেঞ্চুরি”, যা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ছ’জন ইংলিশ ফুটবলার, অর্থাৎ অর্ধেক ইংল্যান্ড দল। মারাদোনার জীবনও ওই ম্যাচটির মতোই, গৌরবময় আলোকশিখা আর প্রবঞ্চনাময় লজ্জার নিকষ অন্ধকার যেখানে পাশাপাশি সহাবস্থান করে।

Leave a Reply

0 Comments
%d bloggers like this:
scroll to top