ছবির নাম:জালবন্দী
অভিনয়ে:প্রিন্স, দীপঙ্কর দে, পায়েল সরকার, দর্শনা বণিক, জুন মালিয়া
রেটিং :৩.৫/৫
✍🏻প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার
আপনজনদের আগামী দিনগুলোকে নিশছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে দিতেই জীবনবীমা। আবার এই জীবনবীমাই ব্যক্তিজীবনের চূড়ান্ত গোপনীয় উপদ্রুত এলাকাগুলোর অকরুণ উন্মোচন করে। বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র প্রযোজক আদিনাথ মল্লিক (দীপঙ্কর দে) তরুণ বীমাকর্মী অনীশ দত্তকে (প্রিন্স) দিয়ে দশ কোটি টাকার বীমা করাতে চান, যার নমিনি রামকৃষ্ণ মিশন! এক প্রৌঢ়ের এই আপাত ধর্মচেতনা-উন্মেষের বাহ্যিক খোলসের আড়ালে রয়েছে জীবনের বহুস্তরীয় নগ্নতা ও রহস্য। পচনশীল মানবিক সম্পর্ক, জৈবিক তাড়না ও স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্র হিসেবে অবাধ যৌনতার সাতরঙা রামধনু এবং টানটান রহস্যে ভরপুর উচ্ছল ঘটনাস্রোত। মোটামুটি এই হল সমরেশ মজুমদারের কাহিনি অবলম্বনে প্রযোজক-পরিচালক পীযুষ সাহার ছবি ‘জালবন্দী’।
পায়েল সরকার ও প্রিন্স
ছবির প্রতিটি চরিত্রের একটি করে নিজস্ব কক্ষপথ আছে এবং সেই কক্ষপথে ঘূর্ণনের গতি-প্রকৃতিও আলাদা৷ কিন্তু যোগফল জীবনের এক মহাজাগতিক অর্গ্যানিক বিন্যাস৷ চিত্রলেখা সেন (জুন মালিয়া) আদিনাথের জীবনের এক সিক্রেট চ্যাপ্টার। পৃথিবীর কাছ থেকে দু’হাত ভরে বঞ্চনা গ্রহণের পর বিশ্বকে পাল্টা হিংস্রতার অঞ্জলি দিতে সে দায়বদ্ধ। আদিনাথের মেয়ে গার্গী (দর্শনা বণিক) দু’টি বিষয় জানে। এক, সে সুন্দরী। আর দুই, নিজের রূপের পসরাকে কীভাবে বিনা দ্বিধায় ব্যবহার করতে হয়। রিয়াঙ্কা (পায়েল সরকার) চরিত্রটি একটি কেরিয়ার সর্বস্ব অভিনেত্রী-সত্তার এপিটোম।
প্রিন্স ও দর্শনা বণিক
অনীশ দত্ত (প্রিন্স) জীবন সংগ্রামে জারিত এক বহুস্তরীয় চরিত্র৷ সারাক্ষণ ভয়ে সিঁটিয়ে থেকে আচমকা উত্তরণের জেদ পেয়ে বসে তাকে। কেরিয়ারের শুরুতেই এমন একটি চরিত্র পাওয়া একই সঙ্গে সৌভাগ্যের এবং ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। জীবনের প্রথম ছবিতে অভিনেতা প্রিন্স নিজের চরিত্রের পরিমিতি ঠিকঠাক উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং শো-অফ করার লোভ বিসর্জন দিয়ে পরিণত আন্ডার-অ্যাক্টিং উপহার দিয়েছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়।
প্রিন্স ও দর্শনার সঙ্গে প্রযোজক-পরিচালক পীযূষ সাহা
পোড় খাওয়া প্রযোজক-পরিচালক পীযূষ সাহার গল্প বোনার দক্ষতা বরাবরই অসাধারণ। সঙ্গে গোপী ভগতের সিনেমাটোগ্রাফি ও প্রণয় দাশগুপ্তের সম্পাদনার যুগলবন্দি আইসিং অন দ্য কেক। মেদ-বর্জিত পূর্ণাঙ্গ শিল্প-নির্মাণে অমিত-ঈশাণের সঙ্গীতও কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
ছবির নেতিবাচক দিক তাহলে কোনটি? সমরেশ মজুমদারের থ্রিলারের স্বাভাবিক চরিত্র অনুসরণ করেই প্রতিটি চরিত্র, সম্পর্ক ও ঘটনাস্রোত আত্মসর্বস্বতার তীব্র দহনে দগ্ধ। দর্শক-মনকে দু’দণ্ড শান্তির ছায়া উপহার দেওয়ার জন্যে সামান্য সিনেম্যাটিক ইম্প্রোভাইজেশনের প্রয়োজন ছিল।